ডিজিটাল মার্কেটিং কি! কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটি জার্নি শুরু করবেন সম্পন্ন গাইডলাইন

ডিজিটাল মার্কেটিং কি কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটি জার্নি শুরু করবেন সম্পন্ন গাইডলাইন

ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (স্মার্ট-মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট) ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং করার প্রক্রিয়া। ডিজিটাল মার্কেটিং হলো আধুনিকতম বিপণন ব্যবস্থা। এটি বর্তমান বিশ্বে সবথেকে কার্যকরী মার্কেটিং পন্থা।

এই পন্থায় সহজে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে পণ্যের গুণাগুন তুলা ধরতে পারি। ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ানো, সেবা, ও পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয়। আমি নিজে ডিজিটাল মার্কেটিং করে, আমার সেল বৃদ্ধি করছি। গ্রাহকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। এতে গ্রাহকের সাথে সুসর্ম্পক স্থাপন করতে পেরেছি। আমি রিপিটেড গ্রাহক পেয়েছি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর উদাহরণ:

ডিজিটাল মার্কেটিং করে বিক্রয় বৃদ্ধির বাস্তব একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং এর উদাহরণ তুলে ধরলাম।

ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং

ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন”

মনে করি, আমি একটি পোশাকের ব্র্যান্ড চালু করেছি। নতুন শুরু করেছি। কয়েকমাস চলছে। খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। আমি বেশি-বেশি মানুষের কাছে আমার ব্র্যান্ডের প্রচার চালাতে চাই। কিভাবে করতে পারি। এক্ষেত্রে, আমি ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে “ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন” চালু করেছিলাম।

আরো পড়ুন: ফেসবুক কতো ভিউ কতো টাকা দেয়?

“ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন”- এর মাধ্যমে আমি শুধু আমার টার্গেটেড কাস্টমারদের বিজ্ঞাপন দেখিয়েছিলাম। যেমন, “ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন”- চালু করার আগে আমি পণ্য বা সেবানুযায়ী গ্রাহকের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম।

উদাহরণ;

১. পণ্য: একটি দেশীয় জামদানি শাড়ি;

২. লক্ষ্য: ১৮-৩৫ বছর বয়সী ফ্যাশন সচেতন নারীদের বিজ্ঞাপন দেখিয়েছি।

৩. প্ল্যাটফর্ম: ফেসবুকে এডস ক্যাম্পেই চালিয়েছি।

৪. ক্যাম্পেইন সেট-আপ: এডস ক্যাম্পেইন সেট-আপ করছিলাম। আকর্ষণীয় ছবি বাছাই করছিলাম। জামদানি শাড়ি পরিহিত মডেলের ছবি দিয়ে এডস ক্যাম্পেইন করছিলাম। এবং বিজ্ঞাপনের জন্য কাস্টম থাম্বনেইল তৈরি করছিলাম। এখানে জামদানি শাড়ি নিয়ে বেশকিছু তথ্য তুলে করছিলাম। একটি বিশেষ অফার দিয়েছিলাম গ্রাহকদের জন্য। যেমন; ক্যাম্পেইন চলাকালীন ২০% ছাড়ে অর্ডার করুন।

৫. টার্গেটেড কাস্টমার: এবার, আমি সেই সব নারীদের বিজ্ঞাপন দেখাতে চেয়েছিলাম; যারা জামদানি শাড়ি এবং শাড়ি লিখে ফেসবুকে সার্চ করে। গুগলে সার্চ করে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে শাড়ির ভিডিও দেখে। জামদানি শাড়ি নিয়ে পোস্ট পড়ে। পোস্টে লাইক করে। কমেন্ট করে। লাভ-রেয়েক্ট করে।

আরো পড়ুন: টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়! (নতুদের জন্য)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপকারিতা:

একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ডিজিটাল মার্কেটিং করেছি। ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে যে ফেসবুক এডস ক্যাম্পেইন চালিয়েছি সেটা ট্যাক করতে পারেছি। কতো টাকা খরচ করলাম। কতজন বিজ্ঞাপন দেখেছে। কতজন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেছে। কতজন গ্রাহক কনর্ভান হলো। এভাবে সহজেই টার্গেটেড কাস্টমারদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বিক্রয় বৃদ্ধি করেছি।

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং:

(Social Media Marketing) যেমন; ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্ট্রগ্রাম, টুইটার, পিনটারেস্ট, লিংকডইন ইত্যাদি।

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন:

গুগল সার্চ ইঞ্জিনসহ যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কি-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে প্রথম রেজাল্ট হিসেবে আমার কী-ওয়ার্ডকে শো করানোই হলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন এর কাজ।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং;

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং হলো গুগল সার্চ ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে বিজ্ঞাপন দিয়ে কী-ওয়ার্ড, ওয়েব পেজ, অ্যাপস, ইউটিউব ভিডিওসহ যেকোনো অনলাইন সেবাকে প্রথম পেজে নিয়ে আসা হলো এর কাজ।

আরো পড়ুন: মেয়েদের ঘরে বসে আয়করার উপায়

ইমেইল মার্কেটিং:

গ্রাহকের ইমেইল আইডি সংগ্রহ করে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। তারপর, পণ্য বা সেবার নিয়ে বিস্তারিত লিখে গ্রাহকদের ইমেইল করতে হবে। কোনো নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে নিয়মিত গ্রাহকদের ইমেইল পাঠিয়ে তথ্য নিশ্চত করা ।

কনটেন্ট মার্কেটিং:

বিভিন্ন ভ্লগ, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিকস, টেক্সট, এবং ইমেজের মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। আর, ভিডিও, ইমেজ, ইনফোগ্রাফিক্সের মাধ্যমে কোনো সেবাকে সহজেই ভিয্যুলাইজেশন করা যায়। এতে সেল বেশি হয়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কোনো পণ্য বা সেবা সেল করে কমিশন অর্জন করা। বা কমিশনের বিনিময়ের কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবারদের দিয়ে পণ্য বিক্রয় কিরিয়ে নেয়া। যেমন; আমার এই ব্লগ পোস্টের মধ্যে আমি কোনো অ্যাফিলিয়েট লিংক দিয়ে সেই পণ্য সর্ম্পকে বিস্তারিত বলে দিলাম।

যারা আমার ব্লগ পড়তে আসবে তারা পণ্য সর্ম্পকে জানতে পারবে। সেই অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় সেই কোম্পানি থেকে যতো পণ্য ক্রয় করবে তার উপর সর্বচ্চো ২০% পর্যন্ত কমিশন আমি পাবো। এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

আরো পড়ুন: ব্লগিং করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়

অনলাইন বিজ্ঞাপন:

অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেয়া যেমন; গুগলে বিজ্ঞাপন দেয়া। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া। লিংকডইনে বিজ্ঞাপন দেয়া। ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেয়া।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল কাজ হলো পণ্যের প্রচার করে বিক্রয় বৃদ্ধি করা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্যের প্রচারণা চালানো। ব্র্যান্ডের প্রচার করা। বিক্রয় বৃদ্ধি করা। গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যায়।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান প্রধান কিছু কাজ নিম্নে দেয়া হলো;

১. ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বৃদ্ধি করা:

ডিজিটাল মার্কেটিং করে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ানেস বৃদ্ধি করতে পারবেন। সারা বিশ্বের বা নির্দিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের মধ্যে আপনার ব্র্যান্ডের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, এবং অন্যান্য ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে ব্র্যান্ডের পরিচিতি বৃদ্ধি করতে পারবেন।

২. ট্রাফিক বৃদ্ধি করা:

ওয়েবসাইট, অনলাইন শপে বেশি বেশি গ্রাহক ভিজিটর আনার জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল কৌশল প্রযোগ করা হয়। যেমন; সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO, বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন, ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।

৩. কাস্টমা-সেলার সম্পর্ক মেইনটেন:

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারেছি। গ্রাহকদের সকল চাহিদা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দিচ্ছি। তাদের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বযোগ্যতার সৃষ্টি করেছি। ইমেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটি এবং সঠিক কাস্টমার সার্ভিসের মাধ্যমে কাস্টামর-সেলার সর্ম্পক মেইনটেন করা সম্ভব।

৪. লিড জেনারেশন

লিড জেনারেশন করা ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম সেরা একটি কাজ। গ্রাহক বা ক্লায়েন্টদের কাছে পণ্য বা সেবা নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে পারলে লিড জেনারেশন করতে পারবেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এসব তথ্য পরবর্তীতে পণ্যের মান উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে, বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন। লিড জেনারেশন হলো-ফর্ম ফিল আপ করানো। ইমেইল সাবস্ক্রিপশন নেয়া। কন্টেস্টের মাধ্যমে কন্টাক্ট ফরম ফরম পূরণ করা হয়।

৫. বিক্রয় বৃদ্ধি

লিড জেনারেশন করতে পারলে, সেই লিড থেকে পণ্যের সেল বৃদ্ধি করা সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিং লিড বৃদ্ধি করা যায়। বিভিন্ন অফার, ডিসকাউন্ট, বা বিশেষ ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে গ্রাহককে পণ্য বা সেরা কিনতে উৎসাহিত করা যায়।

৬. ডাটা বিশ্লেষণ:

ডিজিটাল মার্কেটিং-এর একটি বড কাজ  হল, সহজে ডাটা ট্র্যাক করা যায়। আপনি বিভিন্ন এনালিটিক্স টুল ব্যবহার করে ডাটা সংগ্রহ করতে পারেন। এসব ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারবেন। এসব টুলস ব্যবহার করে দেখতে পারেন কেমন ফল পাচ্ছেন। আমি হাতে হাতে ফল পেয়েছি। কোথায় আরও উন্নতি করতে হবে, বা কোন কৌশল সফল হচ্ছে।

৭. সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাঙ্কিং বৃদ্ধি

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন র‌্যাঙ্কিং বৃদ্ধি করেছি। গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে আমার ওয়েবসাইট সবার উপরে নিয়ে আসতে এটা আমাকে সহায়তা করেছে।

৮. পণ্যের প্রচার ও বিজ্ঞাপন

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন চালিয়ে প্রচার বাড়ানো যায়। যেমন; গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস, ইনস্টাগ্রাম অ্যাডস, টুইটার অ্যাডস ইত্যাদি, পণ্যের প্রতি গ্রাহকদের আকর্ষণ বাড়াতে। এসব এডসছাড়া এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর কথা কল্পনাও করা যায় না।

৯. কনটেন্ট মার্কেটিং

মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন। এসব কনটেন্ট এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন। কাজকে সহজ করে দিবে। যেমন ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিকস, ইবুক ইত্যাদি। এই কনটেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য দেওয়া এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করা।

এছাড়া, ডিজিটাল মার্কেটিং আরও অনেক কৌশল ব্যবহার করে একটি ব্যবসা বা ব্র্যান্ডকে সফল করার জন্য সমন্বিত কাজ করে।

1 thought on “ডিজিটাল মার্কেটিং কি! কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটি জার্নি শুরু করবেন সম্পন্ন গাইডলাইন”

  1. Pingback: ইমেইল আইডি খোলার নিয়ম ২০২৫ - incometips.info

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top