ক্রেডিট কার্ড কি?- ক্রেডিট কার্ড হলো একটি বিশেষ ধরণের প্লাস্টিক কার্ড। যে কার্ড কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। ক্রেডিট কার্ড মূলত লোন প্রদান করার জন্য সরবরাহ করা হয়। কার্ড হোল্ডার এই কার্ডের সাহায্যে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারেন।
Table of Contents
ক্রেডিট কার্ড কি
গ্রাহকরা সাধারণত এই কার্ডের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোনের মাধ্যমে শপিং করতে পারে। সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে পারে। ইউটিলিটি বিল প্রদান করতে পারে। ক্রেডিট কার্ড মূলত এক ধরণের লোন সুবিধা। যা সাধারণত একজন গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্ত পূরণ করে নিতে পারে।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন প্রদনা করে। এই লোনের জন্য সুদ দিতে হয় না। চলতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ করে পরের মাসে নির্দিষ্ট তারিখে তা পরিশোধ করতে হয়। নির্দিষ্ট তারিখের পর প্রতিদিন উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। এছাড়াও, ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন চার্জ দিতে হয়। যেমন MASTER CARD, VISA CARD

ক্রেডিট কার্ডের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. লোনের সুবিধা: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সীমার মধ্যে লোন প্রদান করে। ব্যবহারকারী লোন নিয়ে কেনাকাটা করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করতে পারেন। একে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভাষায় “ক্রেডিট লিমিট” বলে।
২, পেমেন্ট সিস্টেম: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান বা যেকোনো অনলাইন, অফলাইনে শপিং করে বিল পেমেন্ট করতে পারবেন। সকল স্বীকৃত পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য। প্রতিষ্ঠানগুলো বিলবোর্ডে লিখে রাখে ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট গ্রহণযোগ্য।
৩. কিছু ক্রেডিট কার্ডে মাসিক বিলিং সাইকেল সুবিধা আছে। এসব ক্রেডিট কার্ডে বিল মাসের যেকোনো দিনে পরিশোধ করা যায়। কোনো রকম অতিরিক্ত বিল প্রদান করতে হয় না। আবার, ফাইনও দিতে হয় না।
৪. ক্যাশব্যাক অফার: সকল ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট অফার থাকে। এসব অফারে কেনাকাটার উপর নির্ভর করে পয়েন্ট প্রদান করে থাকে। এসব পয়েন্টের উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: ইমেইল আইডি খোলার নিয়ম ২০২৫
ডিজিটাল মার্কেটিং কি! কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটি জার্নি শুরু করবেন সম্পন্ন গাইডলাইন
ক্রেডিট কার্ড কি কাজে ব্যবহার হয়?
১. কেনাকাটার সুবিধা: ক্রেডিট কার্ডের মূল সুবিধা হলো কেনাকাটায়। নিজের সুবিধামতো কেনাকাটা করতে পারবেন। সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। কাছে টাকা নেই। পার্স নেই কোনো সমস্যা নেই। কার্ড ব্যবহার করে বিল প্রদান করতে পারবেন। পরের মাসে সেটা পরিশোধ করে দিলেই হলো।
২. ভ্রমণে প্রি-হোটেল বুকিং: দেশ বিদেশের ভ্রমণে যেতে চান? আগেই হোটেলে প্রি-বুকিং করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন। দেশ-বিদেশের সকল ফাইভ-স্টার হোটেলসহ থ্রি-স্টার, টু-স্টার হোটেলেও ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে। এছাড়াও, বিমান টিকেটসহ ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিমান টিকেট ক্রয়ের উপর ডিসকাউন্ট প্রদান করে।
৩. ইউটিলিটি বিল পরিশোধ:
অনেক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী তার মাসিক বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বিল,বা মোবাইল ফোনের বিলও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পরিশোধ করা যায়। এসব বিল পরিশোধ করেও পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। যা পরিবর্তীতে আপনার বিভিন্ন অফার গ্রহণে কাজে লাগবে।
ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা কি কি?
১. সহজে লোন পাওয়া: গ্রাহক যখনই ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করুক না কেন, তখনই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারবেন। ক্রেডিট কার্ড সাধারণত ইমাজেন্সসি মূহূর্তে কাজে লাগে।
২. ক্যাশব্যাক অফার: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে পয়েন্ট পাবেন। যেমন; ক্যাশব্যাক বা রিওয়ার্ড পয়েন্ট। এই পয়েন্ট বা রিওয়ার্ড ব্যবহার করে পরবর্তী কেনাকাটা করতে পারেন।
৩. ফ্রি- বিমা সুবিধা: কিছু ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিমা সুবিধা দিয়ে থাকে। এই বিমা সুবিধা ভ্রমণ বা কেনাকাটাকে আরো নিরাপদ করে তোলে। কিছু কিছু ক্রেডিট কার্ডে বিমা সুবিধা; যেমন ট্রিপ ক্যান্সেলেশন, ট্রিপ ডিলে, এবং হারানো লাগেজ কভারেজ থাকে।
ক্রেডিট কার্ডের ক্ষতিকর দিক কি?
১. লোনের চাপ: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা করার সময় সরাসরি পেমেন্ট করতে হয় না। তাই, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা হতে পারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দেয়। আপনি লোন নিতে পারেন। কিন্তু যদি সময়মতো সেই ঋণ পরিশোধ না করেন তাহলে, প্রতিদিন সুদ বৃদ্ধি পাবে। যা দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
২. সার্ভিস চার্জ ও সুদ: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেয়া লোন যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করেন, তবে আপনার উপর অতিরিক্ত সুদ এবং ফি আরোপ করবে। কিছু ক্ষেত্রে, সুদের হার অত্যন্ত উচ্চ হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৩. অতিরিক্ত খরচ: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অতিরিক্ত কেনাকাটা করার প্রবণতা থাকলে, পরিহার করুন। কারণ, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অতিরিক্ত কেনাকাটা ব্যক্তিগত আর্থিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যা আপনার পারিবাড়িক জীবনে প্রভাব পরবে। তাই আগেই সাবধান হয়ে যান।
৪. ক্রেডিট স্কোর: যদি আপনি নিয়মিত ঋণ পরিশোধ উপর ক্রেডিট কার্ডের স্কোর নির্ভর করে। নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ না করলে আপনার ক্রেডিট স্কোরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর, খারাপ ক্রেডিট স্কোর ভবিষ্যতে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। সেই জন্য নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করুন।
ক্রেডিট কার্ডের উপযুক্ত ব্যবহার কি?
১. ক্রেডিট কার্ড সীমিত ব্যবহার: ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সীমিত কেনাকাটা করুন। নিজের আর্থিক সামার্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করুন। ঝোঁকের বসে বেশি ব্যবহার করেছেন তো আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পরবেন।
২. সময়মতো বিল পরিশোধ: ক্রেডিট কার্ড বিল সময়মতো পরিশোধ করুন। ক্রেডিট কার্ডেরে নিয়ম মেনে ব্যবহার করুন। এসব নিয়ম অতিরিক্ত সুদ এবং চার্জ থেকে দেয়া থেকে বিরত রাখবে।
৩. ক্রেডিট লিমিট: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সময় অবশ্যই ক্রেডিট লিমিটের প্রতি নজর রাখবেন। শপিং গিয়ে কখনোই ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম করবেন না।
৪. সাশ্রয়ী কার্ড বেছে নিন: সবথেকে সাশ্রয়ী ক্রেডিট কার্ড বেছে নিতে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে তুলনা করুন। যে কার্ডের সুযোগ-সুবিধা সবথেকে বেশি সেই কার্ডটি বেছে নিন।
উপসংহার:
ক্রেডিট কার্ড আপনার আর্থিক লেনদেন সহজ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ক্রেডিট কার্ড এর সকল নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা জেনে বুঝে ব্যবহার করুন। উপর্যুক্ত কারণছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। পকেটে ক্রেডিট কার্ড থাকলেই ব্যবহার করবেন না। আশাকরি, সব সীমাবদ্ধতা দূর করে ক্রেডিট কার্ডটি আপনার আর্থিক লেনদেনের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। ধন্যবাদ, আজকের পোস্টটি পড়ার জন্য।
আরো পড়ুন: টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়! (নতুদের জন্য)
মেয়েদের ঘরে বসে আয়করার উপায়
Pingback: মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ; ঘরে বসেই ইনকামের দারুণ সুযোগ। -
Pingback: মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করার ১০টি সেরা অ্যাপস! (২০২৫ সালের আপডেট লিস্ট) -
Pingback: ২৪০ টাকা ফ্রী বিকাশ পেমেন্ট একদম ফ্রি? -